বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০২০

ঠিক কবিতা ৯ : শক্তিপ্রসাদ ঘোষ


 

সকাল 

শক্তিপ্রসাদ ঘোষ 

বারান্দায় দাড়াতেই ছুটে আসে উৎকট গন্ধ মৃত্যু খবর সময়টা দাড়িয়ে আছে আতঙ্কে শারীরিক ঠোকাঠুকি নেই সামাজিক দূরত্বে সবাই ঘরের ভেতর পা ফেলছি ভয়ে রুগ্ন পৃথিবী                 শুয়ে আছে বারান্দায় দাঁড়িয়ে স্বপ্ন দেখে এক ফালি রোদ নেচে বেড়ানো সকাল।

ঠিক কবিতা ৯ : অঞ্জলি দে নন্দী, মম

 


নারীমিষাশী ও কালী

অঞ্জলি দে নন্দী, মম


ওহে বৎস!
তুমি কি খাও?
ডিম্ব, মাংস, মৎস্য।
না না না,
আমি তো নিরামিষাশী।
আমি খাই না
ওসব খানা।
ওয়াও! ওয়াও! ওয়াও!
স্বাত্ত্বিক পথে এগিয়ে যাও!
আমি ঐ পথেই বেশি বিশ্বাসী।
হা হা হা!!!......
নারী জীবন হাসে অট্টহাসি।
ওহে! তুমি তো নিত্য নারী মাংস ভক্ষণ কর হে!
তারপর আবার তাকে খুনও কর হে!
তোমার লালসা তো নির্মম বেহায়া।
পুরুষরূপী রাক্ষস তো তোমার কায়া!
ধিক্কার জানাই রাশি রাশি রাশি...
শিক্ষার মর্মান্তিক পরিণাম তুমি।
নৃশংস দীক্ষার তুমি নরকভূমি।
আমি এ সময়ে উন্মুক্ত করি আমার খড়্গ।
আমিই শয়তান ধ্বংসকারীনী কালী।
আমিই তোমার বানানো নরককে পরিবর্তীত করি।    গড়ি পাপহীন নির্ভয়ের স্বর্গ।
আমি করাল রূপীনী, মহাভয়ঙ্করা, অসুর নাশিনী।
আমি সকল রমণীর দেহবাসীনি।
আমি অসৎ শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ী অট্টহাসিনী।
আমার সুশক্তি 
রক্ষাকারীনী ভক্তি।
আমি অত্যাচারীর রক্ত পান করি।
আমার রক্ত আঁখি
আমি অগ্নিময়ী করে রাখি।
আমি নিরীহ প্রাণ ত্রাণ করি।
আমি নিঃশেষ করি জগতের দুঃখের কালি।
আমিই সেই সে নারী, দেবী, কালী।

ঠিক কবিতা ৯ : বৈদূর্য্য সরকার



 আশ্বিনে, বিহার


বৈদূর্য্য সরকার 

জনপদ ছুঁয়ে চলেছি নদীর সাথে পূবতীর ধরে
ভাঙা রাস্তা ব্রেক জার্নি, মানুষের ভিড় অনাবিল
পোশাক ধর্ম বদলে যায় আঁধার থেকে আলোয় 
দোকান বাজার মসজিদের নিশান মন্দির চত্বর
আজানের ডাক সংকীর্তন পেরিয়ে চলেছি রোজ ।

এই পথ দিয়ে একদিন ইতিহাস হেঁটেছিল,
আসন্ন উৎসবের আলো ছড়িয়ে রয়েছে পথে
পর পর মাংসের দোকানে রক্তস্রোত দামদর,
অসম্পূর্ণ মাটির কাঠামো আশ্বিনের অন্ধকারে
কিশোরী মনে বাসা বেঁধেছে একদলা রক্ত ভয়। 

মহোৎসব তলা পেরিয়ে বরবকপুর ঘুরে 
শ্যামনামের নগর, জগদ্দলে চাপা পড়া ভট্টপল্লি টোল,  
জমায়েত সিপিয়েম পার্টি ভূতবাগান ছাড়িয়ে
পাকিস্তান বাজারে উঠেছি, দু'হাতে রাম রহিম...
এ দেশেই বোধহয় এত বিচিত্র নাম সম্ভব। 

ঠিক কবিতা ৯ : অরবিন্দ মাজী


 

ভুলি নাই

 অরবিন্দ মাজী


দুচ‍্যোখভরে দ‍্যেখেছিলম্ 
ফ‍্যকফ‍্যকা ভোর বেলাতে
মাঝক‍্যুলহির হরিমেলাতে
গোবর জলের  মল্ল  দিতে...

দ‍্যুচোখভরে দ‍্যেখেছিলম্
বাড়ির নামর বাঁধা ঘাটে
বেস‍্যামবেলায় কলসি হাতে
দ‍্যুলকি চ‍্যালে সিন‍্যাতে য‍্যাতে...

দুচ‍্যেখভরে দ‍্যেখেছিলম্
আবছা আঁধারে সন্ধ‍্যারাত‍্যে
ঝ‍্যকঝ‍্যকা ফচ্চ আ্যগনাতে
তুলসীতলে পদ্দীম্ জ‍্যালাতে...

দ‍্যুচোখভরে দ‍্যেখেছিলম্
ফ‍্যকফ‍্যকা জোস্টারাত‍্যে
ভাদুপরবের জাগরণ রাত‍্যে
ঢুলুঢুলু চ‍্যেখে রাত জ‍্যাগতে...

দ‍্যুচোখভরে দ‍্যেখেছিলম্
ছাপা সূতির শাড়ির ভীতর
চুড়ি-প‍্যরহা মেহদি হাতে
পরবথানের ক‍্যুলহি মুঢ়‍্যাতে...

ভুলি নাই,সোব আছে মনের ক‍্যুনে-
দিনগুলা দৌড়েযে পেছনে পেছনে...

  *পূর্ব পুরুলিয়ার মানভূঞয়া ওরফে মানভূমি উপভাষায় (আঞ্চলিক কথ‍্যভাষায় )রচিত।*

ঠিক কবিতা ৯ : তন্ময় হালদার



অজানার ভিড়ে

তন্ময় হালদার



রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা ওই দূরে গাছের নিচে,

আমার শৈশবের স্মৃতিগুলো ঘুমিয়ে আছে |

ডাকলেম তারে,

সাড়া দিল না;

কেবল গাছের পাতাগুলি হা ও য়া য় দুলে ওঠে

যেন আমাকে বলতে চায় অসময়ে ডেকে---

আমাকে বিরক্ত কোরো না|

হতাশা বুকের মধ্যে আরো চেপে বসে---

ন্যায় অন্যায়ের প্রবনতা, আমার ভিতরকার

ভালো মানুষটাকে অস্বচ্ছ আয়নার সামনে

দাঁড় করিয়ে দিল |

চোখের খিদে মেটাতে গিয়ে

কত পাপ, কত অপরাধ করেছি---

হিসেব করলেও মেলেনি কখনো,

আমার ভিতরকার ভালো মানুষটার বিবেক

আমাকে ভালো পথের সন্ধান দিলেও

তা সাময়িক মনকে সান্ত্বনা ছাড়া কিছুই নয়,

আবেগ যে কী তার অর্থ---

আজও অজানা রয়ে গেল ||

ঠিক কবিতা ৯ : সৌভিক দাস



জোৎস্নার ঘ্রাণ 

সৌভিক দাস 


আকাশে জোৎস্নার ঘ্রানের হাত ধরে রুদ্ধশ্বাসে বয়ে চলছে স্নিগ্ধতা,
মেঘের ধূসর চুল শুয়ে আছে চাঁদের পিঠে উবুর হয়ে
নিকটে স্বচ্ছ বাতাস কাঁচের মতন ধরা দিয়ে ফেলে মেঘবালিকার ছদ্মনামে।

এদিকে রাতের সঙ্গে সঙ্গে মনের দ্বন্দ্বে অমলীন সম্পর্ক গড়ছে
সময়ের আগন্তুক খাতায় প্রতিটা ভাঁজে লিখে যাচ্ছে তার নাম,
যেন শেষ স্মৃতির উন্মোচনে মুহূর্ত ভরা পূর্ণিমার গান।

নিজের প্রতিকৃতিহীন নিজস্ব আমি
     নিজেকেই ভুলে যাচ্ছি মাঝে মাঝে 
           আদর ও আবদারের ভালোবাসার রূপের রং,
এমনি জোৎস্নার গন্ধ ভরা রাতে বয়ে চলে 
বিভিন্ন স্বপ্নের কাটাকুটি খেলার মেলবন্ধন ।

প্রত্যেকটি জোৎস্নায় বসন্তের ঘর সাজায় 
শীতল প্লাবনে শিউলির সাথে আলিঙ্গনে আটকে যায়,
নতুন রূপে চাঁদ ,আকাশের হাতছানিতে আরো গল্প বানায়।। 

ঠিক কবিতা ৯ : সমাজ বসু


 

ঘুম


সমাজ বসু


চলো হারিয়ে যাওয়া রাস্তায় একবার ঘুরে আসি--
ঘাড়ের ওপর লাফিয়ে পড়া অটো কিংবা বাইকের মোড়ে
সারি সারি নিয়ন-দোকানের শোরুম ছুঁয়ে দেখি--
ব্যাস্ত চলাচলের কলার তোলা মনোভাব।
অনেকদিন হল,
চৌকো রুমাল থেকে হারিয়ে গেছে ঘামের গন্ধ--
কিংবা--
ছাতা ফেলে যাওয়া বৃষ্টির সখ্যতা।
চলো,শূন্যতার পাশ কাটিয়ে বেড়িয়ে পড়ি
কারো জন্মদিনের ডাকে,
কফি মগ,বার্থডে কেক,নিদেন একটা ব্যুকে ফিরে আসুক
আমাদের দিনযাপনে।

আর ভাল লাগে না,এই রূপোকাঠি ছোঁয়া ঘুম।

ঠিক কবিতা ৯ : দেবব্রত রায়

 


 


পুণ্যতোয়া একটি নদীর নাম 


দেবব্রত রায়  


৹ গতকাল ৹


                          .           মেঘ ভাঙা বৃষ্টিতে রফিকুল মধুমিতা সনত অলোকেশ আমরা সবাই পুণ্যতোয়ার তীরে অঝোরে ভিজলাম! আমাদের সাথে নিরবে ভিজেছিল বট অশ্বত্থ নিম আর, হরিতকীর জঙগল ! বুড়িভৈরবীর শ্মশান, আমাদের ইস্কুল, ফুটবলমাঠ, আদিগন্ত চরাচর জলসই হতেই ,  ঘাসের আশ্রয় থেকে ফড়িং, উবুইয়ের দল উদ্বাস্তুর মতোই  বেরিয়ে এসেছিল,খোলা আকাশের নীচে! যেন একটা দীর্ঘ মন্বন্তরের পর  ভোজের উৎসবে রবাহূত  কাক, শালিকের দল 'রাক্কুসে' খানসেনাদের মতোই,ঝাপিয়ে পড়েছিল  সেইসব নরম শরীরের দখল নিতে !  
 বিরানব্বইয়েও পোক্ত সুরবালা বলেছিল, দ্যাশ থিইক্যা পলাইয়া আসনের সময় বিধম্মীগো হাতে ধম্ম খোয়াইলাও, পুণ্যতোয়ার ছোঁয়ায় তেঁহাদের  হগগলেরই গোলোকপ্রাপ্তি হইসে ! 
                 আমার" স্বদেশী " ছোট কাকা শুনে  বলেছিলেন,    জানি না, এইযে গুচ্ছশেকড়ের শরীর জুড়ে কতশত ভালোলাগা, অভিমান,গলা বুজেআসা- ব্যাথা লেপ্টে  রয়েছে.... 
তারা কী,এসবকিছুই বাসি কাপড়ের মতো ফেলে  রেখে  মাধ্যাকর্ষণের চেয়েও একটি তীব্র টান পার হয়ে গোলোকধামে পৌঁছোতে পারে ! 
        যে বয়সটা আমাদের অনেককিছুই জানার জন্য যথেষ্ট  নয় ,ঠিক সে-বয়সেই,  মধুমিতা, অলোকেশের ছোড়দি, ফুলপিসি, আমার রাঙা কাকীমাকে প্রজাপতির মতো একটি রঙিন  ডানামেলা জীবন বাকী রেখেই  অজানা গোলোকধামে কেন চলে যেতে হয় ! 
             আমাদের  এই পাখিগ্রাম, ফুটবলমাঠ, পুণ্যতোয়া,  বট, অশ্বত্থ, নিম, হরিতকী জঙগলের চেয়েও কি সুন্দর সুরবালার গোলোকধাম! সেখানে কি শুধুই , ভাঁড়ে ভাঁড়ে অমৃত সাজানো থাকে, নৃত্যগীত আর, তুলতুলে-নরম পালকের বিছানায় অফুরান-আনন্দ শরীর জড়িয়ে থাকে মায়ের ওমের মতো  ! মধুমিতার মৌমাছি-নৃত্যের চেয়েও কি ভালো নাচে ওখানের মেয়েরা!  
গতকাল আমাদের কাদামাখা  ফ্রক প্যান্ট-শার্টগুলো পুণ্যতোয়ার স্রোতে জড়াজড়ি করে হুটোপুটি আর,ডুব সাঁতারের কাছেই শিখেছিল , এর চেয়ে সুখ আর কিছুতেই নেই !     


 ৹ আজ ৹
              

                              বুধবার  মধুমিতার বিয়ে! অলোকেশ যাবে না। ওর রেস্তোর অভাব! ( না-কী, অন্যকিছু!) রফিকুল বাংলাদেশের কবিতা মেলায়! সনতের সঙ্গে আমাদের কারোরই আর যোগাযোগ নেই!  ও এখন কুলিটিলায় ফুলটুসির ঘরে রাত্রি কাটায়! আমি ব্যারাকপুরে...... 
অনেকদিন পর একটা মৃত্যুর খবর পেয়ে পুণ্যতোয়ার তীরে এসে দাঁড়ালাম! সনতের নিভে যাওয়া চিতা দায়হীন আবর্জনার মতোই ভেসে গেছে রাক্ষুসি নদীর স্রোতে !  বৃক্ষহীন,ফসলহীন  এই  ভূমি, বৃষ্টিরোহিত এই আকাশ, পুণ্যতোয়ারও যেন কোনো দায় নেই একসময়ের দুরন্ত ফুটবলার সনতের প্রতিটি আত্মহত্যাকে স্মরণে রাখার!
          নির্জন দুপুরে পুণ্যতোয়ার পাড়ে এসে দাঁড়াতেই, নজরে পড়লো , কয়েকটা কুকুর আর, কাকের দঙগল যেন কীসের মীমাংসা নিয়ে  ভীষণ ক্রুদ্ধ !  মনে হলো,ওরা বিদ্রোহী সনতের মৃত্যুবিষয়ক আলোচনায় বট নিম অশ্বত্থ আর,পুণ্যতোয়ার এই অবহেলার  বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ-সভা ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে  ! 
সেই সোরগোল থেকে অনেকটাই  দূরে , আটপৌরে একটি মেয়েকে দেখলাম ঘাটের কিনারায় উদাস তাকিয়ে  আছে  বহু দূরে বিন্দুর মতো ধীরেধীরে একটি নৌকার হারিয়ে যাওয়া লক্ষ্য করে! কেন জানি না, আমার মনে হলো ,এই মেয়েটিই সনতের ফুলটুসি ! আমি পাড় থেকে  ওর পাশ দিয়েই ঘাটে নেমে এলাম !  কিন্তু, মুহূর্তের জন্য  মেয়েটি আমার দিকে ফিরেও দেখলো না! আমি সেই বিষন্ন রঙের মেয়েটির ছায়া এড়িয়ে পুণ্যতোয়ার জলে নামতেই  বুঝলাম , আমার মাথার উপরের ঘোলাটে আকাশ, এই পুণ্যতোয়া আমাদের নয়!  মৃত শালিকের মতোই বিষন্ন দুপুরের এই আলো, পুণ্যতোয়ার এই ভীরু স্রোতকে আমি  চিনি না!   


৹ আগামীকাল ৹


            সময়ের সাথে সাথে পুণ্যতোয়া তার ডেনসিটি  হারিয়ে  ক্রমশ অসারেই বেড়েছে! আমাদের স্কুল, খেলার মাঠ, ভৈরবির শ্মশান, আমাদের পাখিগ্রাম, সবকিছু গ্রাস করে একটা  পাইথনের মতোই ভরা পেট নিয়ে পড়ে আছে পুণ্যতোয়া নামের একটি পৃথুলা নদী ! এক সময়ের A4-সুন্দরী এখন যেন আ অল ডিভারিং  ওল্ড লেডি   ! রিসেন্টলি আমাদের শুধু  নামের গ্রামখানি পরিবর্তনের ঝোড়ো হাওয়ার গতিতে একটি রয়্যাল সিটি হয়ে উঠছে! যেন স্পিডোমিটারের সর্বোচ্চ ইনডেক্স ছুঁয়ে বিল্ডআপ করেছে  করপোরেট অ্যাপার্টমেন্টগুলো ! এয়াররুটগুলোকেও তথষ্ট রেখে নিত্যনতুন  মাথা তুলেছে জায়গান্টিক টাওয়ারস !এসব দেখলেই মনে হয়, যেন সুরসাধনার মাঝে বুলডোজার, ক্রেন, জেসিবি  যন্ত্র-অসুরের রুড ইনভেসন !এ যেন সবকিছু লয় করার জন্যই অরণ্য-প্রকৃতির বিরুদ্ধে  প্রলয়ছন্দের একটা অসহ্য বিদ্রোহপনা  ! এখানে রাত্রিহীন টাওয়ারের মাথায় চাঁদ ওঠে লোহার তাওয়ার মতোই !চব্বিশঘন্টা নিজের চামড়ার ছেঁচকি পোড়া দুর্গন্ধ সহ্য করেও মানুষ  তার নাশারন্ধ্রের  বিশেষ গুণটির জন্যেই বোধহয়,   আজও কোনোক্রম বেঁচেবর্তে আছে  নইলে,এই পুঁতিময়দুর্গন্ধে সে কবেই নিজেকে হত্যা করতো  ! এখানে ক্লান্তির মুহূর্তে  আর ক্লোরোফিলের আশ্বাসটুকুও পাওয়া যায় না কারণ, এখানে কোনো গাছপালা নেই ! যেহেতু, গাছপালায়-ই নেই তাই, এখানে কোনো পাখিও নেই!  পাখিদের সুর হীন, ক্লোরোফিল হীন একটা আনপ্রোডাক্টিভ ল্যান্ডের বাসিন্দা আমরা !                             
                আমার বাড়ি থেকে একটি ওয়াকিং ডিস্টেন্সে "আনন্দি কফি শপ"! সেখানে মাঝেমধ্যেই প্রোফেসর সাংভি-র সঙ্গে দেখা হলে আমাদের গল্প হয়। আমি খবর নিই তার নী-ট্রান্সপ্লান্টের বিষয়ে।সেও জিজ্ঞেস করে, আমার এনজিওগ্রামের খবর কী ?  

ঠিক কবিতা ৯ : উদয় শংকর দুর্জয়

 





এ লেটার টু জুলয়েট'স সেক্রেটারি
উদয় শংকর দুর্জয় 
 
ভেরোনা শহরের সেই ছাল ওঠা দালানের শরীরে অনেকের মতো তুমিও একবার চিঠি গেঁথে দিয়ে এলে। কোন কলতান তোমার মন-বাউলের দেশে উড়িয়েছিলো প্রেমের সাদা পাল, কখনও জানতে দাওনি। কখনও জানতে দাওনি, কখন পূব-শ্রাবণের বাদল এসে শুনিয়ে গেছিলো ভালো লাগার টুকরানুভূতি। আর তাই অবশেষে জুলিয়েটের শরনাপন্ন। তুমি জানতে যে, জুলিয়েট তোমার বুকের বিষন্ন হ্রদে আটকে থাকা মেঘপুঞ্জের খবর পড়ে আপ্লুত হবেন আর তোমাকে উত্তর লিখবেন। তোমার মনের খবর আমি রাখিনি কখনও তবে বহু বছর পর এই ভেরোনা শহরে, এই বাকল খোলা দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, তোমার জ্বলজ্বল করা দুটি চোখ আটকে পড়ে আছে ইটের ফাঁকে।  সেই চেনা চোখ দুটো তুলে নিয়ে ভনভন করে হাটা শুরু করলাম অন্য রাস্তার দিকে। কিন্তু চিঠির উত্তর! উল্টো রথে তখন দারুণ হাওয়া; ক্যাপোলো বাড়ির ব্যালকনিতে জুলিয়েটের সেক্রেটারি তোমার চিঠির প্রতিত্তোর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার হাত থেকে গলে পড়া কালো জ্যোস্না দেখছি আর তোমার চিঠির সেই শব্দলয়ের গা ঘেঁষে থাকা আর্তনাদকে ধারণ করছি। টের পেলাম, এডিগে নদীর শান্ত জলাশয়ের দিকে তাকিয়ে শুধু আমার নয় তোমারও প্রতিচ্ছবি ভেসে আছে।